তোশাখানা অর্থ এমন একটি ভাণ্ডার যেখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন রকমের মহামূল্যবান উপহার সামগ্রী সংরক্ষিত থাকে। এসব উপহার সামগ্রীর মধ্যে দেশি বা বিদেশি তৈজসপত্র, স্মারক মুদ্রা, বিভিন্ন ধরণের স্মরণিকা, মহান ব্যক্তির প্রতিকৃতি অথবা আলোকচিত্র, শিল্পকর্ম, লোকশিল্প বা হস্তশিল্পের নমুনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবনে এরূপ একটি সমৃদ্ধ তোশাখানা রয়েছে, যেটি বঙ্গভবনের মানুক হাউজে অবস্থিত। এই তোশাখানা সংরক্ষণের জন্য ‘তোশাখানা সংরক্ষণ ও প্রশাসন বিধিমালা ১৯৭৪’ প্রণয়ন করা হয়। পরে এটি সংশোধন করে ‘তোশাখানা সংরক্ষণ ও প্রশাসন বিধিমালা ১৯৯০’ জারি করা হয় এবং ২০১২ সালে বিধিমালাটি পুনরায় সংশোধন করা হয়। বর্তমানে তোশাখানাটি সংস্কারাধীন রয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রপ্রধানকে উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান বা খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ প্রদত্ত উপহারসামগ্রী প্রদর্শনের জন্য এখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিদেশি দূত ও খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ নানারকম শিল্পকর্ম, স্মারক, ক্রেস্ট ইত্যাদি উপহার হিসেবে দেয়ার কারণে তোশাখানার সংগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তোশাখানা থেকে আড়াইশো গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য প্রদান করা হয়েছে। জাদুঘরের আধুনিক শিল্পকলা ও বিশ্বশিল্পকলা বিভাগ এসব সামগ্রী প্রদর্শন করছে।
দেশের সাধারণ মানুষ যাতে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে প্রদত্ত উপহারসামগ্রী দেখার সুযোগ পান সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর এর পাশে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা জাদুঘর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট ২০১৮ সালে বর্তমান তোশাখানা হতে ৭২৬টি বিভিন্ন ধরণের উপহার সামগ্রী সংরক্ষণ ও সর্বসাধারণের দেখার জন্য জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে নবনির্মিত রাষ্ট্রীয় তোশাখানা ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন। বঙ্গভবনের মানুক হাউজ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপহারসামগ্রী সেখানে স্থানান্তর করা হলেও মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানুক হাউজের তোশাখানাটিও এখন বহাল রয়েছে।